নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচন সামনে রেখে প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতির বন্যায় ভাসছে নগরী। প্রচার-প্রচারণা, মাইকিং, মতবিনিময় সভা ও উঠান বৈঠকে অকৃপণ প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ৭ মেয়র, ১১৯ কাউন্সিলর ও ৪২ সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী। দুপুরের পরপরই নগরীজুড়ে প্রচারণায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন তারা। সবার প্রতিশ্রুতির তালিকায় থাকছে জলাবদ্ধতা দূর ও সন্ত্রাসমুক্ত মহানগর গড়ার বিষয়টি।
কেউ কেউ সাধ্যমতো স্মার্ট ওয়ার্ড বা স্মার্ট বরিশাল সিটি গড়ারও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। কেউ বলছেন, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেবেন। সবই বলা হচ্ছে ভোটারদের মন জয় করতে। ভোটারদেরও প্রত্যাশা, যারা নির্বাচিত হবেন, তারা কথা ও কাজে মিল রাখবেন।
আসলে প্রতিদিন সকালেই শুরু হয় প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ। চলে রাত অবধি।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বলেছেন, বরিশাল সিটির প্র্রায় সব ওয়ার্ডেই করপোরেশনের অব্যবস্থাপনাসহ নাগরিকদের সঙ্গে প্রতারণা করায় এখনকার দুরবস্থা। ধর্মকে পুঁজি করে অনেকে নাগরিকদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন, এসব আমাদের শান্তির ধর্ম ইসলাম কখনোই শিক্ষা দেয়নি। আমার জীবনে চাওয়াপাওয়ার আর কিছু নেই, আমি আমার মামা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আমার বাবা শহিদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের আদর্শ ধারণ করে জীবনের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত বরিশালবাসীর সেবা করে যেতে চাই।
সবাইকে নিয়ে নতুন প্রজন্মের সমৃদ্ধ বরিশাল গড়তে চাই। তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নগরবাসীর উদ্দেশে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করছেন, তা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বরিশাল নগরবাসী। বরিশালের মানুষ এতদিন উন্নয়নবঞ্চিত ছিলেন। তারা এর পরিবর্তন চাচ্ছেন। তারা চাচ্ছেন নতুন নেতৃত্ব। আপামর মানুষ নৌকাকে সমর্থন জানাচ্ছেন। তারা উন্নয়নের জন্য আবারও নৌকাকে বিজয়ী দেখতে চান। নির্বাচিত হলে এসব মানুষের প্রত্যাশা পূরণে সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন তিনি।
এদিকে জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস গণসংযোগ ও উঠান বৈঠকে বলেছেন, আপনারা আমাকে নির্বাচিত করলে প্রতিজ্ঞা করছি, আমি চুরি করব না, কাউকে করতেও দেব না। আমার চাহিদার কিছু নেই। আমার বাড়ি-গাড়ি সবই আছে, আমার স্ত্রী ও সন্তানদেরও সবকিছু আছে। তাই শুধু মৃত্যুর জন্য সাড়ে তিন হাত ভালোবাসার মাটি এখন চাই। আপনারা আমাদের পাশে থাকুন। আমি নির্বাচিত হলে যুবসমাজের জন্য বরিশালকে আইটি সিটি হিসাবে গড়ে তুলব। আইটির মাধ্যমে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান হবে। জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া করের বোঝা কমাব।
নগরীর খালগুলোর দুরবস্থা ঘুরে দেখেছি। নির্বাচিত হলে এই খালগুলো পুনরুদ্ধারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব। তিনি নৌকার প্রার্থীর সমালোচনা করে বলেন, একই পানির গ্লাস, শুধু পানি পরির্বতন করেছে এই সরকার, এরা উন্নয়ন করবে না। এছাড়াও তিনি জানান, তিনি মা ও শিশুদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল গড়বেন।
অপরদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের (হাতপাখা প্রতীক) মেয়রপ্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শায়খ চরমোনাই বলেন, বরিশাল সিটিতে মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য বিশেষায়িত কোনো ব্যবস্থা নেই। আমি মেয়র নির্বাচিত হলে, নগরে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চত করতে বিদ্যমান হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে সিটি করপোরেশনের আওতায় এনে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করব।
বর্ধিত এলাকায় পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা না থাকা সত্ত্বেও সিটি করপোরেশন নির্ধারিত ট্যাক্সের বোঝা বহন করতে হচ্ছে। এই সমস্যা দূর করব। বিজয়ী হলে মশকনিধনে কার্যকর পদক্ষেপ নেব।
কাউন্সিলর প্রার্থীরাও নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ সাইয়েদ আহমেদ মান্না এবারও প্রার্থী হয়েছেন। তিনি বলেন, নগরীর মধ্যে একটি স্মার্ট ওয়ার্ড হবে তার।
তিনি দাবি করেন, ৮০ ভাগ কাজ শেষ করেছেন। ফের নির্বাচিত হলে বাকিটুকু সম্পন্ন করবেন। ১৩, ১৪ ও ১৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মিসেস লিকা বলেন, আমাকে ভোট নিয়ে জয়যুক্ত করলে জলাবদ্ধতা দূর করব। ১১৯ কাউন্সিলর ও ৪২ সংরক্ষিত আসনে নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরাও প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছড়াচ্ছেন।