অনলাইন ডেস্ক
চট্টগ্রামে ‘ইসকন নেতা’ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে ঘিরে আদালত প্রাঙ্গণের ঘটনা ও আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবী নেতা নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। পুরো ঘটনার পেছনে পুলিশের ইন্ধনও দেখছেন তিনি। চিন্ময়কে প্রিজনভ্যানে তোলার পর পুলিশের নিস্ক্রিয়তা, প্রিজনভ্যানে চিন্ময় দাসের হাতে হ্যান্ডমাইক কিভাবে গেল— তিনি তারও জবাব চেয়েছেন।
আইনজীবী আলিফকে হত্যার সময়ে ‘জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে পর্যাপ্ত পুলিশ, আর্মি, বিজিবি ছিল’ উল্লেখ করে তাদের কেন ডাকা হয়নি তা নিয়েও প্রশ্ন রেখেছেন। এমনকি এসবের জন্য পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করেছেন, নইলে টেনে হিঁচড়ে নামানোরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। তবে, নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজের দাবি— ঘটনার দিন পুলিশ পেশাদারিত্বের সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালত প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত সমাবেশে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী এসব প্রশ্ন তোলেন।
আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে হত্যায় জড়িতদের ফাঁসি ও অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবিতে ওই বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে যখন কারাগারে নেয়ার জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হলো, তখন পুলিশ কেন নিষ্ক্রিয় ছিল। কাদের ইন্ধনে চিন্ময় কৃষ্ণকে তিন ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল। তাকে হ্যান্ডমাইক দেয়া হয়েছিল। প্রিজন ভ্যান থেকে তিনি কীভাবে বক্তৃতা দিলেন। এসব বিষয়ে তদন্ত করার জন্য পুলিশ কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
পুলিশ কমিশনারকে উদ্দেশে নাজিম উদ্দিন চৌধুরী আরও বলেন, আপনি তদন্ত করে ব্যবস্থা না নিলে এই চট্টগ্রামে থাকতে পারবেন না। কারাগারে চিন্ময় দাসকে ডিভিশন দেয়া হয়েছে। এই ডিভিশন প্রত্যাহার করতে হবে। নইলে কারাগার ঘেরাও করা হবে। বিএনপির অনেক মন্ত্রী-এমপি জেলখানায় গেছেন। অনুরোধ করেছি। আইন দেখিয়েছি। সেদিন ডিভিশন দেওয়া হয়নি।
আইনজীবীদের অনুরোধ জানিয়ে নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সাইফুল ইসলামের হত্যার সঙ্গে যারা সরাসরি জড়িত ও যারা পরোক্ষভাবে এই পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন, তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমাদের সাইফুল ইসলামকে হত্যার মামলায় আসামি গ্রেপ্তার হলে, আমি আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে অনুরোধ থাকবে, আপনারা আসামিপক্ষের কোনো মামলা করবেন না। আমরা ন্যায়বিচার চাই।
গত মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের মূল ফটকের সামনে রঙ্গম সিনেমা হল-সংলগ্ন এলাকায় সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সংঘর্ষে ১০ পুলিশ সদস্যসহ আহত হন অন্তত ৩৭ জন। এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তাদের ওপর হামলা ও কাজে বাধাদানের অভিযোগে পৃথক তিনটি মামলা করে। এসব মামলায় ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার মধ্যে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার আটজন রয়েছেন। পুলিশ বলছে, কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার ভিডিও ফুটেজ দেখে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করছে।
গত মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর করা হয়। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। তখন চিন্ময়ের অনুসারীরা প্রিজন ভ্যান আটকে দেন। তারা এ সময় বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) লাঠিপেটা করে ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। আড়াই ঘণ্টা পর বেলা তিনটার দিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী তারেক আজিজ বলেন, পুলিশ সর্বোচ্চ পেশাদারি ও ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। দায়িত্বে কারও গাফিলতি ছিল না।