নিজস্ব প্রতিবেদক
ঝালকাঠি কীর্তিপাশা-স্বরুপকাঠী মহাসড়কের কীর্তিপাশা মোড় থেকে বেশাইন খান বাজার পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার সড়ক বীরমুক্তিযোদ্ধা জবেদ আলি মিয়া সড়ক নামকরণ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব গোলাম জিলানী সাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপণ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। বীরমুক্তিযোদ্ধা জবেদ আলি মিয়া ১৯২১ সনের ২০ জুন ঝালকাঠী কীর্তিপাশা ইউনিয়নের বাউলকান্দা গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের আহবান ও ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার নির্দেশে তিনি উৎসাহিত হন।
এর প্রক্ষিতে মার্চের ১৫ তারিখের পর ঝালকাঠীর কীর্তিপাশা-স্বরুপকাঠী রাস্তার পাশে হাসপাতালের মাঠে স্থানীয় যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে সংগঠিত করার প্রশিক্ষণ শুরু করেন। কমান্ডার হিসেবে জবেদ আলি মিয়া উক্ত ট্রেনিং পরিচালনা করতেন এবং টেনিং এ পুরানো দো-নালা পুরানো বন্দুক (তোজাম্মেল মিয়ার) এবং বাঁশের লাঠি ব্যবহার করতেন। ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষনায় কিছু দিন পরে পাকিস্তান সেনা বাহিনী ঝালকাঠী শহরে হেলিকপ্টার/গানবেট দিয়ে আক্রমন শুরু করায় শত শত হিন্দু ব্যাবসায়ী শহর ছেড়ে কীর্তিপাশার রাস্তা দিয়ে গ্রামে ধাবিত হয়। এসময় প্রান বাঁচানো মানুষের অর্থসম্পদ কতিপয় দুস্কৃতিকারীরা লুটপাট করে ছিনিয়ে নিতে শুরু করে। খবর পেয়ে জবেদ আলি মিয়া স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, কমিউনিস্ট পাটির কর্মীদের নিয়ে ঝালকাঠী কীর্তিপাশা রাস্তা দিয়ে পলায়নকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন এবং লুন্ঠনকারীদের ধরে এনে রাস্তার পাশেই জন সম্মুখে শাস্তি দেন। তার এই পদক্ষেপের কারনে শহরের মানুষ ঝালকাঠী কীর্তিপাশা বেশাইনখান এর প্রত্যান্ত অঞ্চলে নিরাপত্তা আশ্রয় গ্রহন করেন।
তিনি ১৯৭১ সালের মে মাসের প্রথম দিকে বিভিন্ন এলাকা থেকে তরুনদেরকে উদ্বুদ্ধ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করানোর উদ্দেশ্যে পেয়ারা বাগান স্বরুপকাঠী হয়ে সুন্দরবন এলাকা থেকে ভারত পাঠাতেন। জুন মাসের দিকে আটঘর-কুড়িয়ানায় পকিস্তান আর্মির গানবোটে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমন করলে সেখানে মুক্তিযোদ্ধা জবেদ আলি মিয়া অংশ গ্রহন করেন। উক্ত যুদ্ধে বেশ ক’জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয় এবং গানবোট ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পরে সব মুক্তিযোদ্ধারা কীর্তিপাশায় এসে অবস্থান করেন। শেষের দিকে ক্যাপ্টেন বেগ ও ক্যাপ্টেন শাহাজাহান ওমরের নেতৃত্বে থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। তার বাড়িটি ঝালকাঠী-কীর্তিপাশা-স্বরুপকাঠী সড়কের পার্শ্বেই অবস্থিত।
যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তিনি থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এবং মহাকুমা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসেবে ১০/১২ বছর দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযোদ্ধা জবেদ মিয়া ১৯৮৭ সালের ১০ আগস্ট মারা যান এ মুক্তিযোদ্ধা। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই পুত্র ও আট কন্যা রেখে গেছেন। এ বিষয়ে বীরমুক্তিযোদ্ধা জবেদ আলীর পুত্র হিউম্যান রাইটস এন্ড পীস ফর বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এ্যাড. মনজিল মোরসেদ বলেন, বীরমুক্তিযোদ্ধাদের নামে স্থাপনা এবং সড়ক নির্মান করে সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের আরো সম্মানিত করছেন।
সরকারের এসব কর্মকান্ডের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ ও বীরমুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস ও অবদান বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। এজন্য সরকারের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।