১৯৭১ সালের এই দিনে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমর্পণ করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। পাকিস্তানিরা ২৫ মার্চ থেকে বাংলাদেশ ভূখন্ডে চালায় গণহত্যা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা বীর বাঙালির কাছে বাধ্য হয় পরাজয় স্বীকার করতে। বিজয়ের অনুভূতি সব সময়ই আনন্দের। সেই সঙ্গে বেদনারও। অগণিত মানুষের আত্মত্যাগের ফসল আমাদের স্বাধীনতা। আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি মুক্তিযুদ্ধে মহান শহীদদের। স্বাধীনতার সেই লড়াইয়ে যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের সবার প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা ও বিজয়ের অভিনন্দন। সাড়ে সাত কোটি মানুষের অসীম ত্যাগ আর সাহসিকতার ফসল মুক্তিযুদ্ধের বিজয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অকুতোভয় সংগ্রাম, সর্বসাধারণ, বুুদ্ধিজীবী-লেখক-শিল্পীদের আত্মত্যাগ ছাড়া এই বিজয় সম্ভব হতো না। এসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল ভারত ও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের জোরালো সহযোগিতা এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনেক রাজনীতিক, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, শিল্পী, কবি ও সাহিত্যিকের নৈতিক সমর্থন। আমরা তাদের অবদানও কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি। স্বাধীনতা অর্জিত হলেও বিগত চার দশকের পথপরিক্রমায় অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। কিন্তু শত বাধা-বিঘেœও হতোদ্যম হয়নি এ দেশের মানুষ। দেশে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এখনো তৎপর। আমরা চাই সেই শক্তিগুলো বিনাস করতে। অর্থনৈতিকভাবেও আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত মূল্যবোধ রক্ষায় হতে হবে যতœবান। তবেই বিজয় হয়ে উঠবে অর্থবহ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক মুক্তিসহ গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল, উন্নত একটি দেশ হওয়ার সাধনায় এগিয়ে যাবে এটিই আমাদের প্রত্যাশা। আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় সারাদেশে পালিত হবে মহান বিজয় দিবস। দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পেরিয়ে ১৯৭১- এর এই দিনে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলা ও বাঙালি পায় একটি স্বাধীন ভূখন্ড, লাল-সবুজের পতাকা। বিজয়ের এই দিনে জাতি শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করছে শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের।
Leave a Reply